Social Icons

Saturday, 27 February 2016

আমাদের ৭ জন বীরশ্রেষ্ট

১৯৭৩ সালের ১৫ই ডিসেম্বরে সরকারি গেজেট নোটিফিকেশন অনুযায়ী বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের বীরত্বপূর্ণ আত্মত্যাগ ও অদম্য সাহসিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতির সেরা বীর সন্তানদেরকে শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রীয় সম্মান ও উপাধিতে ভূষিত করা হয়। এদের মধ্যে মরণোত্তর সাতজন সর্বশ্রেষ্ঠ উপাধি ‘বীরশ্রেষ্ঠ’, ৬৮ জন ‘বীর উত্তম’, ১৭৫ জন ‘বীর বিক্রম’ এবং ৪২৬ জন ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত হন।
শহীদ সাত বীরশ্রেষ্ঠরা হলেন রাইফেলস-এর ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ ও ল্যান্স নায়েক মুন্সী আবদুর রউফ, সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর, সিপাহি মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল ও সিপাহি মোহাম্মদ হামিদুর রহমান, নৌবাহিনীর ইঞ্জিনরুম আর্টিফিসার মোহাম্মদ রুহুল আমিন এবং বিমান বাহিনীর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাঁরা রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত আছেন। তাঁরা আমাদের গৌরবের অহঙ্কার। এই বীর সন্তানেরা এখন কে কীভাবে কোথায় শোয়ে আছেন তা দেখার আগে আসুন আমরা আরেকবার অবনত চিত্তে শ্রদ্ধা জানাই তাঁদের জীবন ও বীরোচিত গৌরব গাথাকে গর্বভরে স্মরণ করে।
১. বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর (মার্চ ৭, ১৯৪৯- ডিসেম্বর ১৪, ১৯৭১) : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর ১৯৪৯ সালে বরিশালের বাবুগঞ্জ থানার রহিমগঞ্জ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল মোতালেব হাওলাদার। তিনি ১৯৬৪ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন এবং ১৯৬৬ তে আই.এস.সি পাশ করার পর বিমান বাহিনীতে যোগদানের চেষ্টা করেন, কিন্তু চোখের অসুবিধা থাকায় ব্যর্থ হন। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায়ই পাকিস্তান সামরিক একাডেমীতে ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬৮-র ২ জুন তিনি ইঞ্জিনিয়ার্স কোরে কমিশন লাভ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
১৯৭১-এ স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় তিনি পাকিস্তানে ১৭৩ নম্বর ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটেলিয়ানে কর্তব্যরত ছিলেন। দেশের স্বাধীনতার জন্য তিনি ছুটে এসেছিলেন পাকিস্তানের দুর্গম এলাকা অতিক্রম করে। তবে ৩ জুলাই পাকিস্তানে আটকে পড়া আরো তিনজন অফিসারসহ তিনি পালিয়ে যান ও পরে পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার মেহেদীপুরে মুক্তিবাহিনীর ৭নং সেক্টরে সাব সেক্টর কমান্ডার হিসাবে যোগ দেন। তিনি সেক্টর কমান্ডার মেজর নাজমুল হকের অধীনে যুদ্ধ করেন। বিভিন্ন রণাঙ্গনে অসাধারণ কৃতিত্ব দেখানোর কারণে তাঁকে রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জ দখলের দায়িত্ব দেয়া হয়। স্বাধীনতার ঊষালগ্নে বিজয় সুনিশ্চিত করেই তিনি শহীদ হয়েছিলেন। ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীরকে চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার ঐতিহাসিক সোনা মসজিদ আঙিনায় সমাহিত করা হয়।
যেভাবে শহীদ হলেন
১০ ডিসেম্বর ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর, লেফটেন্যান্ট কাইয়ুম, লেফটেন্যান্ট আউয়াল ও ৫০ জনের মতো মুক্তিযোদ্ধা চাঁপাইনবাবগঞ্জের পশ্চিমে বারঘরিয়া এলাকায় অবস্থান গ্রহণ করেন। ১৪ ডিসেম্বর ভোরে মাত্র ২০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বারঘরিয়া এলাকা থেকে ৩/৪ টি দেশী নৌকায় করে রেহাইচর এলাকা থেকে মহানন্দা নদী অতিক্রম করেন। নদী অতিক্রম করার পর উত্তর দিক থেকে একটি একটি করে প্রত্যেকটি শত্রু অবস্থানের দখল নিয়ে দক্ষিণে এগোতে থাকেন। তিনি এমনভাবে আক্রমণ পরিকল্পনা করেছিলেন যেন উত্তর দিক থেকে শত্রু নিপাত করার সময় দক্ষিণ দিক থেকে শত্রু কোনকিছু আঁচ করতে না পারে। এভাবে এগুতে থাকার সময় জয় যখন প্রায় সুনিশ্চিত তখন ঘটে বিপর্যয়। হঠাৎ বাঁধের উপর থেকে ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্সের ৮/১০ জন সৈনিক দৌড়ে চর এলাকায় এসে যোগ দেয়। এরপরই শুরু হয় পাকিস্তান বাহিনীর অবিরাম ধারায় গুলিবর্ষন। ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর জীবনের পরোয়া না করে সামনে এগিয়ে যান। ঠিক সেই সময়ে শত্রুর একটি গুলি এসে বিদ্ধ হয় জাহাঙ্গীরের কপালে। শহীদ হন তিনি।
পুরস্কার ও সম্মাননা
মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক পদক বীরশ্রেষ্ঠ পদক দেয়া হয় মহিউদ্দনী জাহাঙ্গীরকে। বরিশালের নিজ গ্রামের নাম তাঁর দাদার নামে হওয়ায় পরিবার ও গ্রামবাসীর ইচ্ছে অনুসারে তাঁর ইউনিয়নের নাম ‘আগরপুর’ পরিবর্তন করে ‘মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর’ ইউনিয়ন করা হয়েছে৷ সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে বরিশাল জেলা পরিষদ ৪৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বীরশ্রেষ্ঠর পরিবারের দান করা ৪০ শতাংশ জায়গার ওপর নির্মাণ করছে বীরশ্রষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার৷
২. বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান (২৯শে অক্টোবর, ১৯৪১—২০শে আগস্ট, ১৯৭১): একজন বাংলাদেশী মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত হন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে চরম সাহসিকতা আর বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ যে সাতজন বীরকে সর্বোচ্চ সম্মান বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করা হয় ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান তাদের মধ্যে অন্যতম।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
মতিউর রহমান ১৯৪১ সালের ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকার ১০৯ আগা সাদেক রোডের পৈত্রিক বাড়ি “মোবারক লজ”-এ জন্মগ্রহণ করেন। ৯ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে মতিউর ৬ষ্ঠ। তাঁর বাবা মৌলভী আবদুস সামাদ, মা সৈয়দা মোবারকুন্নেসা খাতুন। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ষষ্ঠ শ্রেণী পাস করার পর সারগোদায় পাকিস্তান বিমান বাহিনী পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন। ডিস্টিংকশনসহ মেট্রিক পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৬১ সালে বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৬৩ সালের জুন মাসে রিসালপুর পি,এ,এফ কলেজ থেকে কমিশন লাভ করেন এবং জেনারেল ডিউটি পাইলট হিসাবে নিযুক্ত হন। এরপর করাচির মৌরীপুরে জেট কনভার্সন কোর্স সমাপ্ত করে পেশোয়ারে গিয়ে জেটপাইলট হন। ১৯৬৫ তে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় ফ্লাইং অফিসার অবস্থায় কর্মরত ছিলেন। এরপর মিগ কনভার্সন কোর্সের জন্য পুনরায় সারগোদায় যান। সেখানে ১৯৬৭ সালের ২১ জুলাই তারিখে একটি মিগ-১৯ বিমান চালানোর সময় আকাশে সেটা হঠাৎ বিকল হয়ে গেলে দক্ষতার সাথে প্যারাসুট যোগে মাটিতে অবতরণ করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ইরানের রানী ফারাহ দিবার সম্মানে পেশোয়ারে অনুষ্ঠিত বিমান মহড়ায় তিনি ছিলেন একমাত্র বাঙালি পাইলট। রিসালপুরে দু’বছর ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর হিসাবে কাজ করার পর ১৯৭০ এ বদলি হয়ে আসেন জেট ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর হয়ে। ১৯৭১ এর ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় ছুটিতে আসেন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
১৯৭১ সালের শুরুতে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে মতিউর সপরিবারে দুই মাসের ছুটিতে আসেন ঢাকা৷ ২৫ মার্চের কালরাতে মতিউর ছিলেন রায়পুরের রামনগর গ্রামে ৷ পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একজন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হয়েও অসীম ঝুঁকি ও সাহসিকতার সাথে ভৈরবে একটি ট্রেনিং ক্যাম্প খুললেন ৷ যুদ্ধ করতে আসা বাঙালি যুবকদের প্রশিক্ষণ দিতে থাকলেন ৷ মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা অস্ত্র দিয়ে গড়ে তুললেন একটি প্রতিরোধ বাহিনী ৷ ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল পাকিস্তানি বিমান বাহিনী ‘সেভর জেড’ বিমান থেকে তাঁদের ঘাঁটির উপর বোমাবর্ষণ করে ৷ মতিউর রহমান পূর্বেই এটি আশঙ্কা করেছিলেন ৷ তাই ঘাঁটি পরিবর্তনের কারণে ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পান তিনি ও তাঁর বাহিনী ৷ এরপর ১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল ঢাকা আসেন ও ৯ মে সপরিবারে করাচি ফিরে যান ৷ ১৯৭১ সালের ২০ আগস্ট শুক্রবার ফ্লাইট শিডিউল অনুযায়ী মিনহাজের উড্ডয়নের দিন ছিলো ৷ মতিউর পূর্ব পরিকল্পনা মতো অফিসে এসে শিডিউল টাইমে গাড়ি নিয়ে চলে যান রানওয়ের পূর্ব পাশে ৷ সামনে পিছনে দুই সিটের প্রশিক্ষণ বিমান টি-৩৩ । রশিদ মিনহাজ বিমানের সামনের সিটে বসে স্টার্ট দিয়ে এগিয়ে নিয়ে আসতেই তাঁকে অজ্ঞান করে ফেলে বিমানের পেছনের সিটে লাফিয়ে উঠে বসলেন৷ কিন্তু জ্ঞান হারাবার আগে মিনহাজ বলে ফেললেন, তিনিসহ বিমানটি হাইজ্যাকড হয়েছে । ছোট পাহাড়ের আড়ালে থাকায় কেউ দেখতে না পেলেও কন্ট্রোল টাওয়ার শুনতে পেল তা ৷ বিমানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মতিউর বিমান নিয়ে ছুটে চললেন৷ রাডারকে ফাঁকি দেবার জন্য নির্ধারিত উচ্চতার চেয়ে অনেক নিচ দিয়ে বিমান চালাচ্ছিলেন তিনি ৷
যেভাবে শহীদ হলেন
২৫ মার্চের ঘটনায় তিনি অত্যন্ত মর্মাহত হন। পরে তিনি দৌলতকান্দিতে জনসভা করেন এবং বিরাট মিছিল নিয়ে ভৈরব বাজারে যান। পাক-সৈন্যরা ভৈরব আক্রমণ করলে বেঙ্গল রেজিমেন্টে ই,পি,আর-এর সঙ্গে থেকে প্রতিরোধ বুহ্য তৈরি করেন। এর পরই কর্মস্থলে ফিরে গিয়ে জঙ্গি বিমান দখল এবং সেটা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ২০ই আগস্ট সকালে করাচির মৌরিপুর বিমান ঘাঁটিতে তারই এক ছাত্র রশীদ মিনহাজের কাছ থেকে একটি জঙ্গি বিমান ছিনতাই করেন। কিন্তু রশীদ এ ঘটনা কন্ট্রোল টাওয়ারে জানিয়ে দিলে, অপর চারটি জঙ্গি বিমান মতিউরের বিমানকে ধাওয়া করে। এ সময় রশীদের সাথে মতিউরের ধ্বস্তাধস্তি চলতে থাকে এবং এক পর্যায়ে রশীদ ইজেক্ট সুইচ চাপলে মতিউর বিমান থেকে ছিটকে পড়েন এবং বিমান উড্ডয়নের উচ্চতা কম থাকায় রশীদ সহ বিমানটি ভারতীয় সীমান্ত থেকে মাত্র ৩৫ মাইল দূরে থাট্টা এলাকায় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। মতিউরের সাথে প্যারাসুট না থাকাতে তিনি নিহত হন। তাঁর মৃতদেহ ঘটনাস্থল হতে প্রায় আধ মাইল দূরে পাওয়া যায়। রশীদকে পাকিস্তান সরকার সম্মানসূচক খেতাব দান করে। প্রসঙ্গতঃ একই ঘটনায় দুই বিপরীত ভূমিকার জন্য দুইজনকে তাদের দেশের সর্বোচ্চ সম্মানসূচক খেতাব প্রদানের এমন ঘটনা বিরল। মতিউরকে করাচির মাসরুর বেসের চতুর্থ শ্রেণীর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
২০০৬ সালের ২৩ জুন মতিউর রহমানের দেহাবশেষ পাকিস্তান হতে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয়। তাঁকে পূর্ণ মর্যাদায় ২৫শে জুন শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে পুনরায় দাফন করা হয়।
৩. বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ হামিদুর রহমান (জন্ম:২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৩ – মৃত্যু: ২৮ অক্টোবর, ১৯৭১): বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করে। মাত্র ১৮ বছর বয়সে শহীদ হওয়া হামিদুর রহমান সাত জন বীর শ্রেষ্ঠ পদকপ্রাপ্ত শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
মোহাম্মদ হামিদুর রহমান জন্ম ১৯৫৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তদানিন্তন যশোর জেলার (বর্তমানে ঝিনাইদহ জেলা) মহেশপুর উপজেলার খোরদা খালিশপুর গ্রামে।তাঁর পিতার নাম আব্বাস আলী মন্ডল এবং মায়ের নাম মোসাম্মাৎ কায়সুন্নেসা। শৈশবে তিনি খালিশপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পরবর্তীকালে স্থানীয় নাইট স্কুলে সামান্য লেখাপড়া করেন।
কর্মজীবন
১৯৭০ সালে হামিদুর যোগ দেন সেনাবাহিনীতে সিপাহী পদে৷ তাঁর প্রথম ও শেষ ইউনিট ছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট৷ সেনাবাহিনীতে ভর্তির পরই প্রশিক্ষণের জন্য তাঁকে পাঠানো হলো চট্টগ্রামের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সেন্টারে৷ ২৫ মার্চের রাতে চট্টগ্রামের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ওখানকার আরও কয়েকটি ইউনিটের সমন্বয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়৷
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে চাকরীস্থল থেকে নিজ গ্রামে চলে আসেন। বাড়ীতে একদিন থেকে পরদিনই মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য চলে যান সিলেট জেলার শ্রীমঙ্গল থানার ধলই চা বাগানের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত ধলই বর্ডার আউটপোস্টে। তিনি ৪নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন। ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে হামিদুর রহমান ১ম ইস্টবেঙ্গলের সি কোম্পানির হয়ে ধলই সীমান্তের ফাঁড়ি দখল করার অভিযানে অংশ নেন। ভোর চারটায় মুক্তিবাহিনী লক্ষ্যস্থলের কাছে পৌছে অবস্থান নেয়। সামনে দু প্লাটুন ও পেছনে এক প্লাটুন সৈন্য অবস্থান নিয়ে অগ্রসর হতে থাকে শত্রু অভিমুখে। শত্রু অবস্থানের কাছাকাছি এলে একটি মাইন বিস্ফোরিত হয়। মুক্তিবাহিনী সীমান্ত ফাঁড়ির খুব কাছে পৌছে গেলেও ফাঁড়ির দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত হতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিবর্ষণের জন্য আর অগ্রসর হতে পারছিলো না। অক্টোবরের ২৮ তারিখে ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও পাকিস্তান বাহিনীর ৩০এ ফ্রন্টিয়ার রেজিমেন্টের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ বাধে। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ১২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধে অংশ নেয়। মুক্তিবাহিনী পাকিস্তান বাহিনীর মেশিনগান পোস্টে গ্রেনেড হামলার সিদ্ধান্ত নেয়। গ্রেনেড ছোড়ার দায়িত্ব দেয়া হয় হামিদুর রহমানকে। তিনি পাহাড়ি খালের মধ্য দিয়ে বুকে হেঁটে গ্রেনেড নিয়ে আক্রমণ শুরু করেন। দুটি গ্রেনেড সফলভাবে মেশিনগান পোস্টে আঘাত হানে, কিন্তু তার পরপরই হামিদুর রহমান গুলিবিদ্ধ হন। সে অবস্থাতেই তিনি মেশিনগান পোস্টে গিয়ে সেখানকার দুই জন পাকিস্তানী সৈন্যের সাথে হাতাহাতি যুদ্ধ শুরু করেন। এভাবে আক্রণের মাধ্যমে হামিদুর রহমান এক সময় মেশিনগান পোস্টকে অকার্যকর করে দিতে সক্ষম হন। এই সুযোগে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযোদ্ধারা বিপুল উদ্যমে এগিয়ে যান, এবং শত্রু পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে সীমানা ফাঁড়িটি দখল করতে সমর্থ হন। কিন্তু হামিদুর রহমান বিজয়ের স্বাদ আস্বাদন করতে পারেননি, ফাঁড়ি দখলের পরে মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ হামিদুর রহমানের লাশ উদ্ধার করে। হামিদুর রহমানের মৃতদেহ সীমান্তের অল্প দূরে ভারতীয় ভূখন্ডে ত্রিপুরা রাজ্যের হাতিমেরছড়া গ্রামের স্থানীয় এক পরিবারের পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়। নীচু স্থানে অবস্থিত কবরটি এক সময় পানির তলায় তলিয়ে যায়। ২০০৭ সালের ২৭শে অক্টোবর বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার হামিদুর রহমানের দেহ বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই অনুযায়ী ২০০৭ সালের ১০ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ রাইফেলসের একটি দল ত্রিপুরা সীমান্তে হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ গ্রহণ করে, এবং যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে কুমিল্লার বিবিরহাট সীমান্ত দিয়ে শহীদের দেহাবশেষ বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। ১১ই ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানকে ঢাকার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
পুরস্কার ও সম্মাননা
মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক পদক বীরশ্রেষ্ঠ পদক দেয়া হয় সিপাহী হামিদুর রহমানকে। এছাড়া তাঁর নিজের গ্রাম ‘খোর্দ খালিশপুর’-এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় হামিদনগর৷ এই গ্রামে তাঁর নামে রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়৷ ঝিনাইদহ সদরে রয়েছে একটি স্টেডিয়াম৷ ১৯৯৯ সালে খালিশপুর বাজারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি কলেজ ৷ স্বাধীনতার ৩৬ বছর পর এই শহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে তাঁর গ্রামে লাইব্রেরি ও স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়৷ ১২ জুন ২০০৭ সালে এই কলেজ প্রাঙ্গণে ৬২ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে শুরু হয় এই নির্মাণ
৪. বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল (জন্ম: ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৪৭- এপ্রিল ৮, ১৯৭১) : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল ১৯৪৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোলা জেলার দৌলতখান থানার পশ্চিম হাজীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা হাবিবুর রহমান সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদার ছিলেন। শৈশব থেকেই দুঃসাহসী হিসেবে খ্যাত ছিলেন। পড়াশোনা বেশিদূর করতে পারেননি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পর উচচ বিদ্যালয়ে দু-এক বছর অধ্যয়ন করেন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
১৯৬৭-র ১৬ ডিসেম্বর বাড়ী থেকে পালিয়ে গিয়ে সেনাবাহিনীতে চাকরি গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক। ১৯৭১-এর প্রথম দিকে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাঠানো হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে ঘিরে তিনটি প্রতিরক্ষা ঘাঁটি গড়ে তোলে এন্ডারসন খালের পাঁড়ে। আখাউড়ায় অবস্থিত চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট দক্ষিণ দিক থেকে নিরাপত্তার জন্য দরুইন গ্রামের দুই নম্বর প্লাটুনকে নির্দেশ দেয়। সিপাহী মোস্তফা কামাল ছিলেন দুই নম্বর প্লাটুনে। কর্মতৎপরতার জন্য যুদ্ধের সময় মৌখিকভাবে তাঁকে ল্যান্স নায়েকের দ্বায়িত্ব দেয়া হয়।
যেভাবে শহীদ হলেন
১৬ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য কুমিল্লা-আখাউড়া রেললাইন ধরে উত্তর দিকে এগুতে থাকে। ১৭ই এপ্রিল পরদিন ভোরবেলা পাকিস্তান সেনাবাহিনী দরুইন গ্রামে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের উপর মর্টার ও আর্টিলারীর গোলাবর্ষণ শুরু করলে মেজর শাফায়াত জামিল ১১ নম্বর প্লাটুনকে দরুইন গ্রামে আগের প্লাটুনের সাথে যোগ দেয়ার নির্দেশ দেন। ১১ নম্বর প্লাটুন নিয়ে হাবিলদার মুনির দরুইনে পৌছেন। সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল তার নিকট থেকে গুলি নিয়ে নিজ পরিখায় অবস্থান গ্রহণ করেন। বেলা ১১ টার দিকে শুরু হয় শত্রুর গোলাবর্ষণ। সেই সময়ে শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। সাড়ে ১১টার দিকে মোগরা বাজার ও গঙ্গা সাগরের শত্রু অবস্থান থেকে গুলি বর্ষিত হয়। ১২ টার দিকে আসে পশ্চিম দিক থেকে সরাসরি আক্রমণ। প্রতিরক্ষার সৈন্যরা আক্রমণের তীব্রতায় বিহ্বল হয়ে পড়ে। কয়েক জন শহীদ হন। মোস্তফা কামাল মরিয়া হয়ে পাল্টা গুলি চালাতে থাকেন। তাঁর পূর্ব দিকের সৈন্যরা পেছনে সরে নতুন অবস্থানে সরে যেতে থাকে এবং মোস্তফাকে যাবার জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু তাদের সবাইকে নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগের জন্য মোস্তফা পূর্ণোদ্যমে এল.এম.জি থেকে গুলি চালাতে থাকেন। তাঁর ৭০ গজের মধ্যে শত্রুপক্ষ চলে এলেও তিনি থামেননি। এতে করে শত্রু রা তাঁর সঙ্গীদের পিছু ধাওয়া করতে সাহস পায়নি। এক সময় গুলি শেষ হয়ে গেলে, শত্রুর আঘাতে তিনিও লুটিয়ে পড়েন।
পুরস্কার ও সম্মাননা
মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক পদক বীরশ্রেষ্ঠ পদক দেয়া হয় মোহাম্মদ মোস্তফা কামালকে। এছাড়া তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত কলেজ প্রাঙ্গণের একটি কোণে ভোলা জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল লাইব্রেরি ও জাদুঘর নির্মাণ করা হয়। এছাড়া মোস্তফা কামালের নামানুসারে গ্রামের নাম মৌটুপীর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে কামালনগর৷
৫.বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্সনায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ(১৯৪৩ – এপ্রিল ৮, ১৯৭১) : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
সংক্ষিপ্ত জীবনী
মুন্সি আব্দুর রউফ ১৯৪৩ সালের মে মাসে ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার (পূর্বে বোয়ালমারী উপজেলার অন্তর্গত) সালামতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মুন্সি মেহেদী হোসেন এবং মাতার নাম মকিদুন্নেসা। কিশোর বয়সে রউফ-এর পিতা মারা যান। ফলে তিনি উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। তিনি অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। ১৯৬৩-র ৮ মে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস-এ ভর্তি হন। তাঁর রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ১৩১৮৭। ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতে চট্টগ্রামে ১১ নম্বর উইং এ কর্মরত ছিলেন। সে সময় তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগদান করেন।
যেভাবে শহীদ হলেন
৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি কোম্পনীর সাথে বুড়িঘাটে অবস্থান নেন পার্বত্য চট্টগ্রামে রাঙ্গামাটি-মহালছড়ি জলপথ প্রতিরোধ করার জন্য ৮ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমান্ডো ব্যাটেলিয়নের দুই কোম্পানী সৈন্য, সাতটি স্পীড বোট এবং দুটি লঞ্চে করে বুড়িঘাট দখলের জন্য অগ্রসর হয়। তারা প্রতিরক্ষি বূহ্যের সামনে এসে ৩” মর্টার এবং অন্যান্য ভারী অস্ত্র দিয়ে হঠাৎ অবিরাম গোলা বর্ষন শুরু করে। গোলাবৃষ্টির তীব্রতায় প্রতিরক্ষার সৈন্যরা পেছনে সরে বাধ্য হয়। কিন্তু ল্যান্সনায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ পেছনে হটতে অস্বীকৃতি জানান। নিজ পরিখা থেকে মেশিনগানের গুলিবর্ষণ শুরু করেন। মেশিনগানের এই পাল্টা আক্রমণের ফলে শত্রুদের স্পীড বোট গুলো ডুবে যায়। হতাহত হয় এর আরোহীরা। পেছনের দুটো লঞ্চ দ্রুত পেছনে গিয়ে নিরাপদ দুরত্বে অবস্থান নেয়। সেখান থেকে শুরু করে দুরপাল্লার ভারী গোলাবর্ষণ। মর্টারের ভারী গোলা এসে পরে আব্দুর রউফের উপর। লুটিয়ে পড়েন তিনি, নীরব হয়ে যায় তাঁর মেশিনগান। ততক্ষণে নিরাপদ দূরুত্বে সরে যেতে সক্ষম হন তাঁর সহযোদ্ধারা।
শহীদ ল্যান্স নায়েক বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের সমাধি পার্বত্য জেলা রাঙামাটির নানিয়ার চরে। তাঁর অপরিসীম বীরত্ব,সাহসীকতা ও দেশপ্রেমের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সর্ব্বোচ সম্মান বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করে।
৬. বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ইঞ্জিনরুম আর্টিফিসার মোহাম্মদ রুহুল আমিন (১৯৩৫ – ডিসেম্বর ১০, ১৯৭১) : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
মোহাম্মদ রুহুল আমিন ১৯৩৫ সালে নোয়াখালী জেলার বাঘচাপড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আজহার পাটোয়ারী, মাতা জোলখা খাতুন। তিনি বাঘচাপড়া প্রাইমারী স্কুলে পড়াশোনা শেষ করে আমিষাপাড়া হাই স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে জুনিয়র মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে পাকিস্তান নৌ-বাহিনীতে যোগদান করেন।
কর্মজীবন
মোহাম্মদ রুহুল আমিন আরব সাগরে অবস্থিত মানোরা দ্বীপে পি.এন.এস বাহাদুর-এ প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নেন। প্রাথমিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর পি.এন.এস. কারসাজে যোগদান করেন। ১৯৫৮ সালে পেশাগত প্রশিক্ষণ শেষ করেন। ১৯৬৫ -তে মেকানিসিয়ান কোর্সের জন্য নির্বাচিত হন। পি.এন.এস. কারসাজে কোর্স সমাপ্ত করার পর আর্টিফিসার পদে নিযুক্ত হন। ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম পি.এন.এস. বখতিয়ার নৌ-ঘাটিঁতে বদলি হয়ে যান। ১৯৭১ সালের এপ্রিলে ঘাটিঁ থেকে পালিয়ে যান। ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত অতিক্রম করে ২ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে থেকে বিভিন্ন স্থলযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ নৌ বাহিনী গঠিত হলে কলকাতায় চলে আসেন। ভারত সরকার বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী কে কলকাতার গার্ডেন রিজ ডক ইয়ার্ডে দুটি গানবোট উপহার দেয়। গানবোটের নামকরণ করা হয় ‘পদ্মা’ ও ‘পলাশ’। রুহুল আমিন পলাশের প্রধান ইঞ্জিনরুমে আর্টিফিসার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
১৯৭১ সালের মার্চে রুহুল আমিন চট্টগ্রামে কর্মরত ছিলেন৷ একদিন সবার অলক্ষ্যে সকলের চোখকে ফাঁকি দিয়ে বের হয়ে পড়েন নৌঘাঁটি থেকে৷ পালিয়ে সীমান্ত পার হয়ে তিনি চলে যান ত্রিপুরা৷ যোগ দেন ২ নং সেক্টরে৷ মেজর শফিউল্লাহ্ নেতৃত্বে ২ নং সেক্টরে তিনি সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং স্থলযুদ্ধের বিভিন্ন অপারেশনে যোগ দেন৷ ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ নৌবাহিনী গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়৷ এ উদ্দেশ্যে নৌবাহিনীর সদস্যদের যাঁরা বিভিন্ন সেক্টর ও সাব-সেক্টরে থেকে মুক্তিযুদ্ধ করছিলেন তাঁদেরকে সেপ্টেম্বর মাসে একত্রিত করা হয় আগরতলায় এবং গঠন করা হয় ১০ নং সেক্টর৷ ইঞ্জিনরুম আর্টিফিসার মোহাম্মদ রুহুল আমিন নৌবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে আগরতলায় একত্রিত হয়ে কলকাতায় আসেন এবং যোগ দেন ১০ নং নৌ সেক্টরে৷
যেভাবে শহীদ হলেন
৬ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী যশোর সেনানিবাস দখলের পর ‘পদ্মা’, ‘পলাশ’ এবং ভারতীয় মিত্রবাহিনীর একটি গানবোট ‘পানভেল’ খুলনার মংলা বন্দরে পাকিস্তানি নৌ-ঘাটিঁ পি.এন.এস. তিতুমীর দখলের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ-এ প্রবেশ করে। ১০ ডিসেম্বর দুপুর ১২ টার দিকে গানবোটগুলো খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছে এলে অনেক উচুঁতে তিনটি জঙ্গি বিমানকে উড়তে দেখা যায়। শত্রুর বিমান অনুধাবন করে পদ্মা ও পলাশ থেকে গুলি করার অনুমতি চাওয়া হয়। কিন্তু অভিযানের সর্বাধিনায়ক ক্যাপ্টেন মনেন্দ্রনাথ ভারতীয় বিমান মনে করে গুলিবর্ষণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন। এর কিছুক্ষণ পরে বিমানগুলো অপ্রত্যাশিত ভাবে নিচে নেমে আসে এবং আচমকা গুলিবর্ষণ শুরু করে। গোলা সরাসরি ‘পদ্মা’ এর ইঞ্জিন রুমে আঘাত করে ইঞ্জিন বিধ্বস্ত করে। হতাহত হয় অনেক নাবিক। ‘পদ্মা’-র পরিণতিতে পলাশের অধিনায়ক লে. কমান্ডার রায় চৌধুরী নাবিকদের জাহাজ ত্যাগের নির্দেশ দেন। রুহুল আমিন এই আদেশে ক্ষিপ্ত হন। তিনি উপস্থিত সবাইকে যুদ্ধ বন্ধ না করার আহ্বান করেন। কামানের ক্রুদের বিমানের দিকে গুলি ছুড়ঁতে বলে ইঞ্জিন রুমে ফিরে আসেন। কিন্তু অধিনায়কের আদেশ অমান্য করে বিমানগুলোকে চ্যালেঞ্জ করা হয়নি। বিমানগুলো উপূর্যপুরি বোমাবর্ষণ করে পলাশের ইঞ্জিনরুম ধ্বংস করে দেয়। আহত হন তিনি। কিন্তু অসীম সাহসী রুহুল আমিন তারপর-ও চেষ্টা চালিয়ে যান পলাশ কে বাঁচানোর। অবশেষে পলাশের ধ্বংশাবশেষ পিছে ফেলেই আহত রুহুল আমিন ঝাঁপিয়ে পড়েন রূপসা-এ। প্রাণশক্তি-তে ভরপুর এ যোদ্ধা একসময় পাড়ে-ও এসে পৌছান। কিন্তু ততক্ষণে সেখানে ঘৃণ্য রাজাকারের দল অপেক্ষা করছে তার জন্য। আহত এই বীর সন্তান কে তারা বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে রূপসা-র পাড়ে-ই। তাঁর বিকৃত মৃতদেহ বেশকিছুদিন সেখানে পড়ে ছিলো অযত্নে, অবহেলায়।
বীরশ্রেষ্ট সম্মান
১৯৭৩ সালের ১৫ই ডিসেম্বর সরকারি গেজেট নোটিফিকেশন অনুযায়ী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সাতজন বীর সন্তানকে মরণোত্তর বীরশ্রেষ্ঠ উপাধীতে ভূষিত করা হয়। সেই তালিকাতে নাম যুক্ত করা হয় মোহাম্মদ রুহুল আমিনের।
সম্মাননা
বীরশ্রেষ্ঠ আর্টিফিসার মোহাম্মদ রুহুল আমিনের জন্মস্থান নোয়াখালীর বাগপাদুরা গ্রামের নাম পরিবর্তন করে এখন রাখা হয়েছে তাঁর নামে আমিননগর৷ বাড়ির সম্মুখে বীরশ্রেষ্ঠর পরিবারের দেয়া ২০ শতাংশ জমিতেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নোয়াখালী জেলা পরিষদ ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করছে রুহুল আমিন স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার৷
৭. বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্সনায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ (ফেব্রুয়ারি ২৬, ১৯৩৬ – সেপ্টেম্বর ৫, ১৯৭১) : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
সংক্ষিপ্ত জীবনী
১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল জেলার মহিষখোলা গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে নূর মোহাম্মদ শেখ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মোহাম্মদ আমানত শেখ, মাতা জেন্নাতুন্নেসা। অল্প বয়সে বাবা-মাকে হারান ফলে শৈশবেই ডানপিটে হয়ে পড়েন। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করে উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সপ্তম শ্রেণীর পর আর পড়াশোনা করেননি। নিজ গ্রামেরই সম্পন্ন কৃষক ঘরের মেয়ে তোতাল বিবিকে বিয়ে করেন। ১৯৫৯-এর ১৪ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস বা ইপিআর-এ যোগদান করেন। দীর্ঘদিন দিনাজপুর সীমান্তে চাকরি করে ১৯৭০ সালের ১০ জুলাই নূর মোহাম্মদকে দিনাজপুর থেকে যশোর সেক্টরে বদলি করা হয়। এরপর তিনি ল্যান্স নায়েক পদে পদোন্নতি পান। ১৯৭১ সালে যশোর অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৮নং সেক্টরে স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগদান করেন।[১] যুদ্ধ চলাকালীন যশোরের শার্শা থানার কাশিপুর সীমান্তের বয়রা অঞ্চলে ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদা’র নেতৃত্বে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন।
যেভাবে শহীদ হলেন
১৯৭১- এর ৫ সেপ্টেম্বর সুতিপুরে নিজস্ব প্রতিরক্ষার সামনে যশোর জেলার গোয়ালহাটি গ্রামে নূর মোহাম্মদকে অধিনায়ক করে পাঁচ জনের সমন্বয়ে গঠিত একটি স্ট্যান্ডিং পেট্রোল পাঠানো হয়। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে হঠাৎ পাকিস্তানী সেনাবাহিনী পেট্রোলটি তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। পেছনে মুক্তিযোদ্ধাদের নিজস্ব প্রতিরক্ষা থেকে পাল্টা গুলিবর্ষণ করা হয়। তবু পেট্রোলটি উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। এক সময়ে সিপাহী নান্নু মিয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে নূর মোহাম্মদ নান্নু মিয়াকে কাঁধে তুলে নেন এবং হাতের এল.এম.জি দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করলে শত্রুপক্ষ পশ্চাৎপসরণ করতে বাধ্য হয়। হঠাৎ করেই শত্রুর মর্টারের একটি গোলা এসে লাগে তাঁর ডান কাঁধে। ধরাশয়ী হওয়া মাত্র আহত নান্নু মিয়াকে বাঁচানোর জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেন। হাতের এল.এম.জি সিপাহী মোস্তফাকে দিয়ে নান্নু মিয়াকে নিয়ে যেতে বললেন এবং মোস্তফার রাইফেল চেয়ে নিলেন যতক্ষন না তারা নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে সক্ষম হন ততক্ষনে ঐ রাইফেল দিয়ে শত্রুসৈন্য ঠেকিয়ে রাখবেন এবং শত্রুর মনোযোগ তারঁ দিকেই কেন্দ্রীভুত করে রাখবেন। অন্য সঙ্গীরা তাদের সাথে অনুরোধ করলেন যাওয়ার জন্যে। কিন্তু তাঁকে বহন করে নিয়ে যেতে গেলে সবাই মারা পরবে এই আশষ্কায় তিনি রণক্ষেত্র ত্যাগ করতে রাজি হলেন না। বাকীদের অধিনায়োকোচিত আদেশ দিলেন তাঁকে রেখে চলে যেতে। তাঁকে রেখে সন্তর্পণে সরে যেতে পারলেন বাকীরা। এদিকে সমানে গুলি ছুড়তে লাগলেন রক্তাক্ত নূর মোহাম্মদ। এদিকে পাকিস্তানী সশস্ত্রবাহিনী, সঙ্গে অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রশস্ত্র, অন্যদিকে মাত্র অর্ধমৃত সৈনিক (ই. পি.আর.) সম্বল একটি রাইফেল ও সীমিত গুলি। এই অসম অবিশ্বাস্য যুদ্ধে তিনি শত্রুপক্ষের এমন ক্ষতিসাধন করেন যে তারা এই মৃত্যুপথযাত্রী যোদ্ধাকে বেয়নেট দিয়ে বিকৃত করে চোখ দুটো উপড়ে ফেলে। পরে প্রতিরক্ষার সৈনিকরা এসে পাশের একটি ঝাড় থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে। এই বীরসেনানীকে পরবর্তীতে যশোরের কাশিপুর গ্রামে সমাহিত করা হয়।

Monday, 8 February 2016

মুস্তাফিজকে নিয়ে দ্রাবিড়ের তুচ্ছতাচ্ছিল

দ্রাবিড় নাকি মুস্তাফিজকে চেনে না ! হায়রে ভারতীয় এদের কাছ থেকে আর ভাল কি আশা করা য়ায় ?ভারতের সাবেক তারকা ক্রিকেটার ও অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড় বাংলাদেশ সফরে আসেন। ক্রিকেটের একটি বড় নাম মুস্তাফিজুর রহমান সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় তার কাছে।
রাহুল অবাক হওয়ার মত কথা বলেছেন এই বিষয়ে। রাহুল দ্রাবিড় বাংলাদেশ সফরে আসেন মূলতঃ নিজ দেশের যুবদলের ক্রিকেট গুরু হিসাবে।
সোমবার মিরপুরে এক সাক্ষাৎকারে মুস্তাফিজ সম্পর্কে একি বললেন তিনি! রাহুল দ্রাবিড় বলেন, মুস্তাফিজের খেলা দেখা হয়নি আমার।
তাই তাকে নিয়ে পরিস্কার কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।  তবে আমি অন্যদের কাছ থেকে শুনেছি ও নাকি ভালো বল করেন।
মুস্তাফিজ যখন ক্রিকেট ভূবনের ভাইরাল তখন রাহুল দ্রাবিড়ের এমন উক্তি হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে। ভারতে মুস্তাফিজের মত নতুন মুস্তাফিজকে খোঁজার চেষ্টা করা হয় সেটাও নাকি তার জানার বাইরে!

Saturday, 6 February 2016

বাংলাদেশের ক্রিক্রেটারদের প্রতি ভারতের চরম অবহেলা !


বাংলাদেশে এক শ্রেণীর  লোক আছে যাদের কাছে পাকিস্তান বললেই মনে হয় তাদের গা জ্বলে উঠেছে । তারা চাচ্ছিল বাংলাদেশ ক্রিক্রেট বোর্ড যেন PSL খেলতে না দেয়। যাক বোর্ড এই রকম কোন আত্নঘাতী সিদ্ধান্ত নেয় নি তাই পাপন ভাইকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ এর ফলে উনি আমাদের ক্রিক্রেটকে অনেক বড় ধংসের হাত থেকে রক্ষা করেছেন । ভাই আপনাদের বলি সব জায়গায় রাজনীতি আর হিংসা খুইজেন না তাহলে আর সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবেন না আর নিজেরা নিজেরা ঝগড়া করে শেষ হবেন। খেলাটাকে রাজনীতি থেকে বাদ দিয়েন। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি ভারত থেকে অনেক অনেক বেশি পাকিস্তান আমাদের ক্রিক্রেটারদের মূল্যায়ন করে। যার প্রমান আমরা দেখতে পাই ২০১৫ তে যখন অস্টেলিয়া বাংলাদেশে নিরাপত্তার অজুহাতে আসল না তখন এক মাত্র পিসিবিই অস্টেলিয়ারর সমলোচনা করেছে বাংলাদেশের হয়ে এমনকি ছোটদের বিশ্বকাপ খেলেতে যখন অস্টেলিয়া একই অজুহাতে বাংলাদেশে আসতে অস্বকৃতি জানাল তখন এই পিসিবিই একমাত্র এর কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে। আর আমরা কিছু হইলেই পাকিস্তানের পিছনে লেগে থাকি। খালি এদের দোষ খুজে বেড়াই । এবারে পি এস এলে পাকিস্তান কিন্তু ঠিকই আমাদের ৪ জন টাইগারকে দলে ভিড়িয়েছে আর আমি নিশ্চিত এবার দল যদি বেশি হত ওরা তাহলে আরো কয়েকজনকে ঠিকই নিত। শুধু কি তাই দেখুন এরা আমাদের সাকিবকে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েই দলে নিয়েছে আইকন খেলোয়ারদের পরেই সাকিবের স্থান শুধু কি তাই দেখুন ওরা দলে নিয়ে সাকিবকে তার পজিশনে খেলতে দিল এবং যার ফলে তারা সাকিবের সেরাটাও বের করে নিতে পারল এবং প্রথম ম্যাচেই তামীমকে খেলালো এবং দুজনই ম্যাচ সেরা হল কারন তাদেরকে ফ্রীভাবে খেলতে দেওয়া হয়েছিল ।
অপরদিকে আইপিল এর কথা মনে পড়ে তৎকালীন সময় ওরা আশরাফুল রাজ্জাক এবং মাশরাফিকে নিয়েছিল ঠিকই মাত্র ১ টি করে ম্যাচ খেলিয়েছিল আর তামীমকেত মাঠেই নামতে দেয় নি । আচ্ছা আপনিই চিন্তা করুন তামীম কি এত বাজে খেলোয়ার যে ১৮ ম্যাচের মধ্যে একটি ম্যাচেও সুযোগ পাবে না। আর সাকিবের কথাত বললে অবহেলার কথা বলে শেষই করা যাবে না। সাকিব যেবার প্রথমে আইপিএল এর নিলামে উঠল তখন সে আইসিসির নাম্বার ওয়ান অল রাউন্ডার অথচ তখন তাকে কোন দলই কিনল না। তার আসল কারন কি জানেন সে একজন বাংলাদেশি তারপরের বার সে সুযোগ পেল ঠিকই কারন পরের বারও সে আন্তজাতিক ক্রিক্রেটে নিজের এক নম্বর আসনটি ধরে রেখেছিল বলে। যেবার সুযোগ পেল সেবার ও তাকে একের পর এক ম্যাচে সাইড বেঞ্চে বসিয়ে রাখল এবং যার ফলও কলকাতা পেল একের পর এক ম্যাচ হেরে। হারতে হারতে অবশেষে তাকে যখন সুযোগ দিল সে তার কারিশমা দেখাতে লাগল কয়েকটা ম্যাচে ম্যান অফ দি ম্যাচ হয়ে। তার পররেও তারা সুযোগ পেলেই সাকিবকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করত এবং কয়েকটা ম্যাচে তাকে বসিয়েও রেখেছিল । আর সবচেয়ে বড় কথা সাকিব এক সত্তিকারেের ম্যাচ উইনার হওয়া সত্তেও তাকে ৬ নম্বর অথবা ৭ নম্বরে ব্যাট করতে হত। আচ্ছা আপনারাই বলুন সাকিব কি ৬ ও ৭ নম্বর পজিশনে ব্যাটিং করার খেলোয়ার সাকিবকে বাদ দিয়ে বুড়া ক্যালিসকে খেলাত এই সবই করা হত সে বাংলাদেশি বলে। তারপরও কলকাতার ২ বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পিছনে সাকিবের অবদান অসাধারন। তারপরও সাকিবকে যে টাকা দিয়ে কিনা হয় ভেবে দেখুনত সাকিবকে কি সঠিক মূল্যায়ন করা হয় । অন্যদিকে সাকিব থেকে অনেক নিন্ম মানের খেলোয়াদের তারা অনেক বেশি মূল্য দিয়ে কেনে। আর এইবার ত চরম অপমান করল সাকিব আর মুস্তাফিজ বাদে কাউকে দলেই নিল না। আচ্ছা তামীম আর মুশফিক কি আই পি এল খেলার যোগ্য না সৌম্য আর তাসকিনের কথা বাদই দিলাম।
এখন একটু চিন্তা করে দেখুন কারা বাংলাদেশকে অবমূল্যায়ন করে। আর এই সৌম্য এবং তাসকিনইত ভারতকে নাকানি চুবানি দিল এত তাড়াতড়ি ভুলে গেল ! আর আজ প‍র্যন্ত এখও ভারত বাংলাদেশকে পূর্ণাঙ্গ একটি সিরিজ খেলতে আমন্ত্রণ জানায়নি । অপরদিকে পাকিস্তানের ৩টা পূর্ণাঙ্গ সিরিজ আমরা বাতিল করেছি সেটা অবশ্য ঠিক আছে কারন বর্তমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তান যাওয়া আরেক আত্নঘাতী সিদ্ধান্ত । তারপরেওত তারা আমন্ত্রণ জানিয়েছে । এখন সমলেচকরা বলতে পারেন পাকিস্তানের র্তমান রিস্থিতি  এর কারনে এই  আমন্ত্রণ তা কিন্তু মোটেও ঠিক না কারন ২০০৩ এ যখন বাংলাদেশ ক্রিক্রেটের করুন তখন কিন্তু বাংলাদেশ  পাকিস্তানে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলে এসেছিল । এখন আপনারাই চিন্তা করুন কে আমাদের ক্রিক্রেটের বন্ধু ! 

Wednesday, 3 February 2016

বেকারদের জন্য সুখবর ফেসবুক দিচ্ছে ২৫ থেকে ১২৫০ ডলার ঋণ !

সুখবর সুখবর বেকারদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ নিয়ে এলফেসবুক ,বিনাপুজিতে ফেসবুকের সাথে চুক্তি করুন, আর আপনি এটা খুব সহজেই  করতে পারেন,যেকেউ এই সুবিধা নিতে পারেন ফেসবুক আইডি থাকলে,বিস্তারিত জেনে নিন  কিভাবে কি করবেন । লেখাটি পড়ার আগেই  হয়তো অনেকে অনেক রকম মন্তব্য করবেন কিন্তু পুরো লেখাটি পড়ার পর সবাই বুঝতে পারবেন। ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ প্রতিনিয়ত ফেসবুক ব্যাবহারকারীদের জন্য নিয়ে আসছেন নতুন নতুন ফিচার আগে যেখানে সাড়ে সাতশো ডলার ঋণ নেওয়া যেত এখন থেকে সেটা সাড়ে বারশত পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।
একটু কঠিন মনে হচ্ছে  গল্পকারে পড়ুন তাহলে আপনাদের বুঝতে সুবিধা হবে। মাসুমা নামের একজন ছাত্রী তার কোন একজন বন্ধুর কাছে শুনলেন ফেসবুকের মাধ্যমে যেকোন পন্য বেচাকেনা কিংবা যেকোন কিছুর বিজ্ঞাপন চালানো যাই, এইজন্য নাকি ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপ আছে,মাসুমার কিছু ব্যাগ আছে যেগুলো সে বিক্রি করতে চাই,কিন্তু বিজ্ঞাপন দেবার মতো কোন টাকা তার কাছে নেই,আজকাল ফেসবুক সবাই ব্যাবহার করে তাই মাসুমা বিভিন্ন মেয়েদের গ্রুপে তার ব্যাগের বিজ্ঞাপন দিতে থাকে কিন্তু গ্রুপের অন্য মেয়েরা মাসুমার বিজ্ঞাপন দেখার সাথে সাথেই রিপোর্ট করে মুছতে ফেলে।
 মাসুমা যথেষ্ট হতাশ হয়ে পড়ে কিন্তু হাল ছাড়েনি,মাসুমা শুনেছিলো ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়া যাই তাই সে একটি ফেসবুক পেজ চালু করে কিন্তু পেজে লাইক খুব বেশী নাই,বন্ধুদের কে ইনভাইট করে তবুও লাইক বাড়ে না, পেজে পোস্ট বুস্ট এবং পেজ প্রমোট অপশন আছে কিন্তু এগুলো করতে হলে ফেইসবুককে ডলার দিয়ে করতে হবে।মাসুমা একটি কার্ডের জন্য ব্যাংকে গিয়েছিলো কিন্তু ডুয়েল কারেন্সির কোন মাস্টারকার্ডে কিংবা ভিসা কার্ড ব্যাংক তাকে দেইনি তবুও পিছু হটেনি মাসুমা। সর্বশেষ এক বন্ধুর কাছে শুনলো আন্তজাতিক বিভিন্ন অনলাইন মার্চেন্ট বিনামূল্যে মাস্টারকার্ড দিয়ে থাকে ।মাসুমা একটি পেওনিয়ার কার্ডের জন্য আবেদন করলো,মাসুমার আবেদন অনুমোদন হবার পর এক মাসের ভিতরে মাস্টারকার্ড পোস্ট অফিসের মাধ্যমে তার হাতে চলে এলো.  মাসুমা মহাখুশি এখন থেকে সে এই কার্ডের মাধ্যমে ফেসবুকে প্রমোশন চালাতে পারবে, মাসুমা তার এই পেওনিয়ার কার্ড ফেসবুকে পেজে সংযুক্ত করার সাথে সাথেই ফেসবুক গ্রহণ করলো এবং 25 ডলার ঝরণা দিলো সর্বপ্রথম অর্থাৎ এই 25 ডলার খরচ করার পর মাস শেষে তাকে বিল দিতে হবে।
প্রথমদিনেই মাসুমা ৫ডলারের বিজ্ঞাপন দিয়ে অর্ডার পেলো ত্রিশ টা, এই পচিঁশ ডলার খরচ করার আগেই মাসুমা শুধু ব্যাগ বিক্রি করে লাভ করলো প্রায় পনেরো হাজার টাকা। ফেইসবুককে এই 25 ডলার বিল দেবার সাথে সাথেই মাসুমা  পেলো আরো 50 ডলার ঝণ, এই 50 ডলারের মাসুমা পাঁচদিনেই খরচ করলো. ফেইসবুককে 50 ডলার বিল দেবার পর ফেসবুক থেকে মাসুমাকে আরো 250 ডলার ঝণ দিলো. মাসুমা এই 250 ডলার খরচ করে তার সমস্ত ব্যাগ বিক্রি করে ফেললো, তার সর্বমোট লাভ দাড়ালো 60 হাজার টাকা.মাসুমা 250 ডলার ফেসবুকের বিল দেবার পর ঝণ পেয়েছে 500 ডলার, মাসুমার ব্যাবসা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে শুধু ব্যাগ নয় আরো অনেক কিছুই যুক্ত করেছেন মাসুমার সাথে কাজ করার জন্য আরো কয়েকজন মেয়েকেও নিয়েছেন. মাসুমা 500 ডলার ফেসবুকের ঝণ শোধ করার পর আবারো ঝণ পেয়েছে 750 ডলার, মাসুমাএখন এই ডলার দিয়ে নিজের পণ্যের বিজ্ঞাপন ছাড়া অনেক কোম্পানির বিজ্ঞাপন দিয়ে দেই,যেহেতু মেয়ে সেহেতু অনেকেই মাসুমার কাছে বিজ্ঞাপন দিতে আসে,অনেক তারকারাও তাদের পেজে লাইক বাড়ানোর জন্য মাসুমার দারস্ত হয়.মাসুমা  750 ডলার ঝণ খরচ করার পর ফেইসবুককে আর বিল দেইনি, একটু চালাকি করে ফেইসবুককে মেসেজ পাঠিয়েছে, মাসুমা
ফেইসবুককে লিখেছিলো আমার ব্যবসা খারাপের যাচ্ছে আমি এই ঝণ পরে শোধ করবো।

Tuesday, 2 February 2016

বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান অস্ট্রেলিয়ায়



আপনি জানেন কি বিশ্বের সবচেয়ে  ব্যয়বহুল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনটি ! অনেকেরই মনে হতে পারে যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ৷ আদতে কিন্তু তা নয়৷ কারণ বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান অস্ট্রেলিয়ায় 
বলা হচ্ছে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য অস্ট্রেলিয়া যেমন একটি ব্যয়বহুল দেশ, তেমনি সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচটাও অনেক বেশি৷ তারপরেই আছে সিঙ্গাপুর আর যুক্তরাষ্ট্র৷ আর শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে কম ব্যয়বহুল দেশ ভারত৷ কারণ সেখানকার জীবনযাপনের ব্যয় তুলনামূলকভাবে অনেক কম৷
এই গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে ১৫ দেশের উপর ভিত্তি করে৷ গবেষণাটি পরিচালনা করেছে ব্যাংকিং জায়ান্ট এইচএসবিসি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ৷ প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায় এক বছরে এক শিক্ষার্থীর পড়ালেখা ও থাকা খাওয়া বাবদ খরচ হয় প্রায় ৪২,০০০ মার্কিন ডলার৷ সিঙ্গাপুরে এর চেয়ে ৩ হাজার মার্কিন ডলার কম ৷ অন্যদিকে যদিি ভারতে পড়তে তাহলে একজন শিক্ষার্থীর খরচ হয় বছরে ৬ হাজার মার্কিন ডলার৷
অস্ট্রেলিয়ার পরেই আছে সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র আর জার্মানি ।
যদিিও ব্যয়ের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র  অবস্থান তৃতীয় তা
রপরেও, গবেষণার প্রতিবেদনটি বলছে শিক্ষা প্রদানের মান যুক্তরাষ্ট্রেই সবচেয়ে ভালো৷ শিক্ষার মানের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থান ব্রিটেনের, তৃতীয় অবস্থানে জার্মানি এবং চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া৷
এইচএসবিসি-র সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান সিমন উইলিয়ামস বলেন, সন্তানকে বিদেশে পড়তে পাঠানোর পেছনে বড় একটা খরচ দিতে হয় অভিভাবকদের৷ কেননা বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই বৃত্তি না নিয়ে, অর্থাৎ প্রাইভেটে পড়ালেখা করেন৷ ফলে পড়ালেখাসহ থাকা খাওয়ার সব খরচটাই বহন করতে হয় অভিভাবককে৷

প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে ৫,০০০ শিক্ষার্থীর বাবা-মাকে প্রশ্ন করে৷ এঁদের মধ্যে ৮৯ ভাগ তাঁদের সন্তানকে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে চান এবং ৭৪ ভাগ চান তাঁদের সন্তানকে বিদেশে পড়াতে৷ তাঁরা এটাও জানান যে, সন্তানের শিক্ষার জন্য তাঁরা তাঁদের আয়ের একটা বড় অংশ সঞ্চয় করেন৷

Gunnies of the Plum

Plum-like fruit, acid and tannin. Each amaraya three apples are the same nutrients. Talk it is raw, ripe, partly goes to the takabhaba. The ripe fruit, raw, cooked, eaten as is or conduct.

Amarate plenty of vitamin C, vitamin B, calcium, iron, carotene, carbohydrates, and small amounts of protein, fiber and anti-oxidant national pekatina. In other words, full of plum pustigune. The inner parts of more than khosaya pustigunatai.
Plum harmful blood cholesterol levels, protect against stroke and heart disease. Vitamin C and calcium to prevent diseases of the teeth and gums and helps the body to build muscle.
amra-1 {focus_keyword} plum yataguna amra 1 indigestion and constipation in the existing pekatina national fiber helps prevent. Keeps the body healthy antioxidant that prevents cancer and other diseases.
Plum skin, nails and hair keep the support is nice. Protects the skin from aging to. Plum is very beneficial for those who are suffering from lack of blood. Amarate plenty of iron in the body due to meet the needs of blood and blood clotting that support.
Arucibhaba playing plum mouth away and increases appetite. The cold, cough and phlegm in the fruit away.
 

Sample text

Advertisement

Your Javascript ads here!

Sample Text

Sample Text

সত্যের সাথে আগামীর পথে এ আমার প্রত্যয়
 
Blogger Templates